থ্রি-ফেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা তিন-ফেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন, সঞ্চারণ এবং বিতরণের কাজে ব্যবহৃত একটি সাধারণ এবং জনপ্রিয় ব্যবস্থা। এটি বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহের কাজে সারা পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ব্যবস্থা। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ তাদের বিদ্যুৎ বিতরণের জাতীয় গ্রীডে থ্রি-ফেজ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। বিশাল বিশাল বৈদ্যুতিক মোটর এবং অনুরূপ অনেক ভারী বৈদ্যুতিক লোডে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করতেও এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
থ্রি-ফেজ ব্যবস্থা অন্যান্য সমতুল্য ব্যবস্থার (যেমন দুই ফেজ বা এক ফেজ ব্যবস্থা) থেকে বেশী সাশ্রয়ী কারণ সমান ভোল্টের বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চারণের জন্য এই ব্যবস্থায় কম পরিবাহকের প্রয়োজন হয়।
গ্যালীলিও ফেরারিস, মিকাইল ডলিভো ডব্রভলস্কি,জোনাস ওয়েন্সট্রম,জন হপকিংসন এবং নিকোলা টেসলার দ্বারা পৃথক পৃথকভাবে ১৮৮০ সালের শেষের দিকে এটি আবিষ্কৃত হয়। নিকোলা টেসলা ১৮৮৭ সালে থ্রি-ফেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সূচনা করেন এবং ১৮৮৮ সালে এর স্বত্ব লাভ করেন।
থ্রি-ফেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাঃ
থ্রি-ফেজ ব্যবস্থায় তিনটি পরিবাহীর (ফেজ) মধ্য দিয়ে একই কম্পাঙ্কের এমন তিনটি পরিবর্তী বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রবাহিত করা হয় যাদের যে কোন এক মূহুর্তের তড়িৎ প্রবাহের মান এক সমান থাকে না। একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহকে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করে বাকী দুটি তড়িৎ প্রবাহকে একটি পূর্ন তড়িৎ প্রবাহ চক্রের (cycle) যথাক্রমে এক-তৃতীয়াংশ ও দুই তৃতীয়াংশ পিছিয়ে(delay) দেয়া হয়। তিনটি ফেজের মধ্যে এই চক্র পার্থক্যের কারনে একটি পূর্ণ তড়িৎ চক্রে সঞ্চারিত তড়িৎ শক্তি সবসময় সমান থাকে এবং এই চক্র পার্থক্যই বৈদ্যুতিক মোটরের মধ্যে পরিবর্তী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরী করে।
থ্রী-ফেজ ব্যবস্থার কিছু বিশেষ সুবিধা আছে যার ফলে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়ঃ
তিন ফেজের বিদ্যুৎ প্রবাহ একে অন্যকে বিয়োগ করে দেয় এবং লিনিয়ার ব্যালেন্সড লোডের ক্ষেত্র যোগফল শূন্য হয়ে যায়। ফলে নিউট্রাল পরিবাহী ব্যবহার না করলেও চলে অথবা এর আকার অনেক কমিয়ে ফেলা যায়। লিনিয়ার ব্যালেন্সড লোডে শক্তি সরবরাহ সবসময় সমান থাকে,ফলে বৈদ্যুতিক জেনারেটর বা বৈদ্যুতিক মোটরকে নির্বিঘ্নে চলতে এবং কম্পন (vibration) কমাতে সাহায্য করে। থ্রি-ফেজ ব্যবস্থা নির্দিষ্ট দিকে ঘূর্নায়মান চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপাদন করতে পারে, ফলে বৈদ্যুতিক মোটর নকশা ও তৈরী করা খুব সহজ হয়ে যায়। এক ফেজ ট্রান্সমিশনের তুলনায় পলিফেজ ট্রান্সমিশনের পাওয়ার লস কম হওয়ায় দক্ষতা বেশি। তিন ফেজ সিস্টেমে পরিবাহী পদার্থ তথা তামার পরিমাণ কম লাগে। তিন ফেজ মেশিনের আকার-আকৃতি অনেক ছোট হয়। তিন ফেজ পদ্ধতির রেগুলেশন ভালো। তিন ফেজ ইন্ডাকশন মোটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। থ্রি-ফেজ মেশিনে কম রিপল সৃষ্টি হয়। থ্রি-ফেজ পদ্ধতিতে সিনক্রোনাইজেশন অনেক সহজ। থ্রি-ফেজ মেশিন আকারে ছোট বিধায় এর দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উভয়ই কম।
EmoticonEmoticon