মায়ানমারে নির্যাতনের শেষনেই রাখাইন মুসলিম জনগোষ্ঠীরর উপর, শতশত মানুষ নিহত আহত হয়েছেন, বাড়ি ঘড়ে আগুন, লুটপাট, ধর্ষণ।
রাখাইন প্রদেশ-ভিত্তিক দু’টি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রেসটিভি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রদেশের মংডু শহরের কাছে একটি পাহাড় থেকে সাত বৌদ্ধ নাগরিকের লাশ উদ্ধারের পর সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডু ও বুথিডং শহরসহ আরো বেশ কিছু শহরে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) প্রায় ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের ওপর আবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দমন অভিযান চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। তবে সেই ঘঠনাই ঘটালো মায়ানমার সরকার।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ওপর এক অতর্কিত হামলায় নয় পুলিশ নিহত হয়। ওই ঘটনার জের ধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা রাখাইন প্রদেশের মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছে মিয়ানমার সরকার:
জাতিসংঘ বলছে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। বিবৃতিতে রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুর্বিষহ বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের বিশেষ মুখপাত্র রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দমন অভিযানের ফলে রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালানোর সময় মানবাধিকার রক্ষার তোয়াক্কা করেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার জন ম্যাককিসিক বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত সংখ্যালঘু নিধনে নেমেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ড পুলিশ যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের গণহারে শায়েস্তা করার অভিযানে নেমেছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নয় পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের অভিযানে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের গুলি করে হত্যা করছে, শিশুদের জবাই করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে এবং নির্বিচারে লুটপাট চালানো হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গা মুসলমানরা নদী পার হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের আবার বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা:
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সর্বশেষ সহিংসতার পর বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে আবারও বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে কয়েকশো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের আবার ঠেলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রথমে টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে।বৃহস্পতিবার রাত থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টার সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ১৪৬জন রোহিঙ্গাকে ধরে ফেরত পাঠিয়েছে। টেকনাফে এবং উখিয়ায় নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে শিশু কিশোর বৃদ্ধা বাংলাদেশে ঢুকবার চেষ্টা করছেন।
মিয়ানমার সীমান্তের কাছের টেকনাফের একটি ইউনিয়নের মেম্বার জালাল আহমেদ বলেছেন, বৃহস্পতিবার মধ্য রাতের পর থেকে তারা মিয়ানমারের ভিতর থেকে ব্যাপক গুলির শব্দ শুনেছেন। এরপর সীমান্তে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের চেষ্টা তিনি দেখেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে কথা বলেছে। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলছিলেন, "মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের বলেছে যে, তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি সংগঠন তাদের উপর আক্রমণ করেছে। সেকারণে তারা অ্যাকশন নিচ্ছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গারা যেন বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা না করে। তারা সহযোগিতা করার কথা বলেছে। তারপরও রোহিঙ্গারা আসার চেষ্টা করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, "আমরা তো সবসময় তাদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাবার দিয়েছি বা সাহায্য করেছি। কিন্তু এতে সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না। সেজন্য এখন সীমান্তে তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে মিয়ানমার সরকারের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশক করেছ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
EmoticonEmoticon